বিয়ানীবাজার নিউজ ২৪। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

মহান শহীদ দিবস ও ভাষা দিবসের বিয়ানীবাজার উপজেলার ৯নং মোল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে স্থাপিত শহীদ মিনার ছিল শ্রদ্ধাহীন। পরিষদের পক্ষ থেকে শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, পরিষদের প্রধান ফটকের তালা একুশের প্রথম প্রহরে খোলে দেয়া হয়নি। ফলে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি এলাকার সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, শহীদ দিবসের দিন পরিষদে আলোচনা  সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে আমরা কার্পন্য করিনী। কিন্তু পরিষদের সচিব নতুন হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা আমরা খুবই মর্মাহত। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এলাকাবাসীর কাছে পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। আগামীতে এসব বিষয়ে আরও সচেতন হবো।

এলাকাবাসী জানান, একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পশ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ দেখতে পান। ভোর বেলাও একই অবস্থায় ছিল। ফলে ইউনিয়নের প্রগতিশীল চিন্তার লোকজন ভাষা শহীদদের সম্মান জানাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল মান্নান গত ইউপি নির্বাচনে মোল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর গত বিজয় দিবসও এলাকাবাসীর চাপে তিনি দুই দিন পর দায়সারাভাবে পালন করেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে শহীদ মিনার। গাছের পাতা আর ময়লার স্তুপ জমে আছে। এ প্রতিবেদক ইউনিয়ন পরিষদ থাকাবস্থায় পরিষদের প্রাঙ্গন ও শহীদ মিনার পরিস্কার করা তোড়জোড় শুরু করেন পরিষদের দায়িত্বশীলরা। তরিগড়ি পরিস্কার কাজ শুরু করেন।

[image link=”http://138.197.71.33/wp-content/uploads/2017/02/mulla-pur-1.png” img=”http://138.197.71.33/wp-content/uploads/2017/02/mulla-pur-1.png” caption=” মোল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদ সম্মুখ অংশে পরিস্কার করছেন একজন কর্মী “]

পরিষদ সচিব মোঃ কামরুল হাসান বলেন, দিবস তাৎপর্য উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছি কিন্তু শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয়নি। ফুল না দেয়াটা আমাদের মারত্মক ভুল হয়েছে। পরবর্তীতে এ ধরনের ভুল না ঘটে সেদিকে আমাদের যথেষ্ট সচেতন দৃষ্টি থাকবে। তিনি বলেন, আমি গত ৫ ডিসেম্বর যোগদান করেছি; সকল কার্যক্রম বুঝে নিতে একটু সময় লেগেছে।

পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ময়দুল হোসেন বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য ১৭ ফেব্রয়ারি পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে কোন রহস্যজনক কারণে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা  হয়নি। কেন হয়নি সেটা আমার বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, ১৭ তারিখের সভায় প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মতানৈক দেখা দেয়ায় এরই কিছুটা প্রভাব পড়েছে এ দিবস উদযাপনে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ভারাক্রান্ত কণ্ঠে শহীদ মিনার দাতা পরিবারের সদস্য হাসান আহমদ খালেদ বলেন, একুশে ফেব্রয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল না দেয়াটা আমাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। এত শখ এবং কষ্ট করে আমরা শহীদ মিনারটি স্থাপন করেছি। কার্যত স্থানীয় পর্যায়ে বাঙালির জাতীয় জীবনের বিশেষ দিনগুলি যথাযথ ভাবে উদযাপন হয় সে লক্ষে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মোল্লাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি বদরুল হোসেন বলেন, জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনে সরকারের সরাসরি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা খুবই ন্যক্কারজনক। চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু: আসাদুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খোঁজ নিয়ে দেখতেছি।

প্রসঙ্গত, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও মোল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তণ চেয়ারম্যান প্রয়াত হাজী আবু বক্কর ময়না’র স্মরণে তার ছেলে আবু হামিদ শাহিন ২০১৩ সালের শেষের দিকে শহীদ মিনারটি নির্মাণ করে দেন। সাবেক চেয়ারম্যান এম এ অদুদ রুকন শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ শহীদ মিনার গত বছর (২০১৬ সনে) ২১ ফেব্রুয়ারি পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সুহেল আহমদ শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।