জুনেদ আহমদ ।। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

২২ ফেব্রুয়ারি ভোরের আলোয় ঘুম ভাঙতেই একটি অধ্যায়ের অবসান! কলেজ  প্রাঙ্গণের হাস্যোজ্জ্বল মুখটি নীরবে চলে গেল ধরিত্রীর আলো-বাতাশ ছেড়ে। গ্রামের মেঠোপথ ধরে আর হাঁটা হবে না তার; ইচ্ছে করলেও আর দেখবে না প্রিয় মুখচ্ছবির সেই মানুষ। বন্ধুদের সাথে ঘুরাফেরা, জমিয়ে আড্ডা দেয়া সবকিছু পেছনে ফেলে চোখের জলে সবাইকে ভাসিয়ে চিরতরে না ফেরার দেশে চলে গেল সে।

বৃদ্ধ বয়সে মমতাময়ী মা নিজের জীবন পঙ্গু করে একটা কিডনি দান করেও শেষাবধি পারলেন না বাঁচাতে তার প্রিয় সন্তানকে। বন্ধু-বান্ধব, এলাকাবাসী, এমনকি চায়ের হোটেল, মুদি ব্যবসায়ী স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় বাচাঁনো গেল তাকে।

হ্যাঁ, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের একাদশ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জিবানুর রহমান জিবানের কথাই বলছিলাম। কিডনি  প্রদাহে  আক্রান্ত হয়ে দুটি  কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৮ বছর বয়সে! মায়ের কিডনি, নিত্য শুভার্থীদের দোয়া, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতা এক সময় ফিঁকে হয়ে ওঠে, মায়ের কোল খালি করে চিরতরে চলে গেল সে না ফেরার দেশে।

এই সেই জিবান যার জীবন রক্ষার্তে প্রাণের বিদ্যাপীঠ ‘দক্ষিণ মুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়’ এর ২৫ বছর পূর্তি  অনুষ্ঠান  স্থগিত  করা হয়। তার জন্য জিবান সহায়ক ট্রাস্ট গঠন করা হয়। এমন কি বিয়ানীবাজারের প্রতিটি দোকান, মসজিদে আমরা সাহায্যর হাত পেতেছি। দেশের মানুষের কথা বললে ভুল হবে প্রবাস থেকেও অনেক সাহায্য পেয়েছি কিন্তু পারলাম না জিবানকে বাঁচাতে, পারলাম না মায়ের কোলে তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে। তথাপি বন্ধু-বান্ধব, এমনকি  বিয়ানীবাজারের মানুষ তারা আজ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে জিবানকে বাঁচাতে তারা সাধ্যের সবটুকু বিলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

আমাদের দেশের কত জিবানের মৃত্যু হয় চিকিৎসার অভাবে। তাদের কাছে জিবান একটি দৃষ্ঠান্ত বিয়ানীবাজারবাসীর কাছে এটি একটি মাইলফলক। জিবান এক ঐক্যের নাম, জিবান মানবিকতার এক অপার সম্ভাবনার নাম। এলাকার মানুষ কিংবা জিবান সহায়ক ট্রাস্টের সকল সদস্য হয়তো জিবানকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি, কিন্তু তাদের এই মহৎ উদ্যোগ চিরভাস্বর হয়ে থাকবে বিয়ানীবাজার তথা এতদ্বঞ্চলের প্রত্যকটা মানুষের হৃদয়ে। এই জীবানের মতো প্রত্যেকটা জিবান যেন সুচিকিৎসার ব্যবস্থা পায়, তার দৃষ্ট্রান্ত বিয়ানীবাজারবাসী ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে।

প্রিয় জিবান, আমরা তোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম, আমাদের মাঝে আরো অনেক বছর দেখতে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার কাছে আমরা পরাজিত। দোয়া করি ভাই তুই তোর পরের জীবন শান্তিতে থাক।

লেখক- শিক্ষার্থী (স্নাতক সম্মান তৃতীয় বর্ষ – এমসি কলেজ, সিলেট)