আহমেদ ফয়সাল। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।

এখন কয়টা বাজে- তিনটা ১৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ড; বাম হাতের কব্জির দিকে এক নজর চেয়ে এভাবে সঠিক সময় বলতে পারে প্রতিবন্ধী রাসেল। কখনো নীল আকাশের দিকে চেয়ে সে সঠিক সময়ক্ষণ বলে দেয়। হাতের কব্জিতে কোন ঘড়ি না থাকলেও তার সঠিক সময় বলে দেয়ার গুণটি সবাইকে মুগ্ধ করে। এক সন্তানের জনক রাসেল আহমদ (২৯) বিয়ানীবাজার পৌরশহরের সুপাতলায় ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে।

ঘড়ি না দেখে সময় বলে দেয়ার গুণটি প্রতিবন্দী রাসেলকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা রেখেছে। অথচ সে জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী ছিল না। তার যখন বয়স নয় বছর তখন সে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। এর পর ভাল হলেও শরিরে নীচ অংশ অবস হয়ে যায়। দরিদ্র পিতা-মাতা আর্থিক দ্বৈন্যতার কারণে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি। যার ফলে রাসেল চিরতরে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। রাসেল এখন দুই পা টেনে টেনে হাঁটা চলা করে। জীবিকা নির্বাহ করে ভিক্ষা করে।

এ প্রতিবেদক ঘড়ি না দেখে সময়ক্ষণ বলার কৌশলটি জানতে চাইলে রাসেল হেসে বলে, ‘মামা এটি বলে দিলেই-তো সব শেষ, আমার কাছে আর কিছু থাকবে না, এটা গোপন থাক। তবে সূর্যের আলোর তেজ এবং রাতের গভীরতা মেপে সে নিজস্ব তরিকায় সঠিক সময় বের করে। রাসেল জানায়, টাইফয়েড সেরে যাবার পর হাঁটতে না পারার কারণে বিছানায় থাকতে হয়েছে দিনে পর দিন। তখন কয়েক মাস এভাবে কাটার পর তার মাথায় দিনের চব্বিশ ঘন্টা গেঁথে যায়। হঠাৎ একদিন সে আবিস্কার করে ঘড়ি না দেখে সে সময় বলতে পারে। এ ক্ষমতা অর্জন করার পর থেকে নিজেকে কিছুটা ক্ষমতাবান ভাবতে থাকে রাসেল। নতুন ক্ষমতা লাভ করার পর শিহরীত হয়ে ওঠা রাসেলের মনোবল বাড়ে। পিতা-মাথার সহযোগিতায় দুই বছর বিছানায় থাকার পর সে পা টেনে টেনে হাঁটতে শেখে নতুন করে!

বিয়ানীবাজার পৌরশহরের সুপাতলায় বসবাস করলেও রাসেলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার কালিবস গ্রামে। তার পিতার নাম অহিদ মিয়া। সে পরিবার নিয়ে ২০০৩ সালে বিয়ানীবাজারে আসে। ২০০৯ সালে চাচাতো বোন রহিমাকে বিয়ে করে। তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।