তিন বছর আগে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। তারপরও তিনি সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকতে চেয়েছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর মহানগরের সর্বশেষ সম্মেলনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। দীর্ঘ দেড় যুগ পর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে বাদ পড়েছেন তিনি।

সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানকে সরিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চেয়েছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। কিন্তু মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদকে শেষ পর্যন্ত সম্মেলনে কোনো পদেই রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পছন্দে’ সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন আসাদের বড় ভাই মাসুক উদ্দিন আহমদ।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান কয়েক বছর ধরে শারীরিক কারণে দলে সময় দিতে পারেন না। ফলে ‘কর্মীবান্ধব’ হিসেবে পরিচিত শফিকুর রহমান চৌধুরী সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সভাপতি তো দূরের কথা, সর্বশেষ সম্মেলনে জেলার সাধারণ সম্পাদক পদও হারিয়েছেন সিলেট-২ আসনের সাবেক এই এমপি।

গত ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে ফিরতে চেয়েছিলেন ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী। হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিকের সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৪ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মতিউর রহমান। তার প্রত্যাশাও পূর্ণ হয়নি।

আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে বঞ্চিত এই নেতারা এখন ‘বড় আশায়’ বুক বাঁধছেন। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের সম্মেলনে কামরান আরও বড় দায়িত্ব পাবেন বলে আশা করছেন তার অনুসারীরা। আসাদ, শফিক, মতিউর, মুশফিকদের অনুসারীরাও তাদের নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মূল্যায়নের আশায় আছেন।

২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সিলেটের চারজন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছিলেন। তাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো মর্যাদাপূর্ণ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হয়েছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কামরানের মতো প্রথমবার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন মৌলভীবাজারের অধ্যাপক রফিকুর রহমান।

সে সময় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও সিলেট থেকে সরিয়ে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। টানা তিনবার একই পদে আসীন মিসবাহকে এবার সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এমন আশঙ্কার মধ্যেও তাকে আসন্ন সম্মেলনে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে আশা করছেন মিসবাহের অনুসারীরা।

মিসবাহের মতো কামরানের পদোন্নতির আশায় রয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগের অনেকে। যদিও কামরান নিজে পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্বে যোগ্য মনে করবেন, তা-ই মাথা পেতে নেব।

সর্বশেষ দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেলেও জোটের স্বার্থে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিক। আওয়ামী লীগের গতবারের সম্মেলনে ব্যাপক আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত ‘বঞ্চিত’ হয়েছিলেন সিলেট মহানগরের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ।

সিলেটে নেতৃত্ব হারানোর পর শফিক ও আসাদ দু’জনেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার আশায় আছেন। অবশ্য প্রকাশ্যে তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব দেবেন, তা-ই মাথা পেতে নেবেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে মূল্যায়নের প্রত্যাশা করছেন সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন তিন বছর আগেও আলোচনায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ব্যারিস্টার ইমন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে সফল না হলেও এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাকে নিয়ে আশায় আছেন অনুসারীরা।

একইভাবে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেসার আহমদকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চান অনুসারীরা। জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ এমপি মৌলভীবাজারের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার আশায় আছেন। এ জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাহুর রহমান ‘দায়িত্ব পেলে’ রাজি বলে মন্তব্য করেছেন।

সিলেট বিভাগের বেশ কয়েকজন নারীনেত্রীও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পেতে পারেন। এদের মধ্যে সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তা অন্যতম। সুনামগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান এমপি জয়া সেনগুপ্তার পাশাপাশি সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা আক্তার খানমের নামও আলোচনা রয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীকে তার অনুসারীরা কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখতে চান। সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী ও সাবেক এমপি সায়েরা মহসিনের সম্ভাবনাও দেখছেন তার অনুসারীরা।

সংবাদ সৌজন্য- দৈনিক সমকাল